গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস || Third Trimester

গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস || Third Trimester

মা হওয়ার মুহুর্তগুলো একদিকে যেমন আনন্দের তেমনি একটু শঙ্কারও। গর্ভবতী মা, অনাগত শিশুর ভবিষ্যৎ চিন্তা ও ডেলিভারি ভীতি নিয়ে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় যত দিন যেতে থাকে গর্ভবতীর দুশ্চিন্তাও বাড়তে থাকে। এসময়ে দুশ্চিন্তা না করে, বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস অর্থাৎ ২৭ সপ্তাহ হতে বাচ্চা জন্মের পূর্ব পর্যন্ত সময় হচ্ছে 3rd Trimester।

ছবি: ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত

৭ মাসের মধ্যে যেহেতু বাচ্চা বড় হয়ে যায় তখন বাচ্চা নিচের দিকে চাপ দেয় তাই এসময় তলপেটের নিচের দিকে হবু মায়েরা ভারী কিছুর চাপ অনুভব করে৷

মূত্রথলি জরায়ুর সামনে হওয়ায় এসময় বাচ্চা বড় হওয়ায় জরায়ু যখন বড় হয়ে যায় তখন অনেক সময় কিছুক্ষণ পরপর প্রসাবের চাপ পায়, যা স্বাভাবিক৷

 এসময়টাতে মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা থাকলে তা বাড়তে পারে আবার নতুন করেও অনেকের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই বেশি করে পানি পান করতে হবে৷ ফ্রেশ ফলের জুস, ডাবের পানি খেতে হবে৷ আর যদি ইউরিন ইনফেকশন হয় তাহলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷

থার্ড ট্রাইমেস্টারে অনেকের শরীরে, হাতে-পায়ে পানি আসে, উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, বুক জ্বালা পোড়া, চোখে ঝাপসা দেখা সমস্যা হতে পারে যা প্রি-একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ৷ তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে৷ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্ত চাপ থেকে পরবর্তীতে হার্ট ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। আর এসবের চিকিৎসা না করালে পরবর্তীতে খিঁচুনি হতে পারে৷ যা মা ও বাচ্চার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে৷

এসময়ে অনেক মায়ের রক্তশূন্যতা দেখা যায়৷ তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করতে হবে৷ প্রয়োজনের সময় রক্ত দিতে পারবে এমন কয়েকজন ব্লাড ডোনার প্রস্তুত রাখতে হবে৷

 ৭ম মাস থেকে বাচ্চার নড়াচড়া খুব ভালোমতো করে অনুভব করা যায়৷ তাই ১২ ঘন্টায় বাচ্চা যদি ১০-১৫ বার বা তার বেশি নড়াচড়া করে বুঝতে হবে বাচ্চা ভালো আছে৷ আর যদি নড়াচড়া ৩-৫ বার বা তার চেয়ে কম মনে হয় তাহলে খুব দ্রুত আপনার চিকিৎসককে জানান, তিনি যে পরামর্শ দিবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন৷ কারণ বাচ্চার কোন অসুবিধা হলে বা অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে নড়াচড়া কমে যেতে পারে৷

অনেকসময় প্রসূতির ডেলিভারি ব্যথা এবং সময়ের আগে পানি ভেঙ্গে যেতে পারে৷ বাচ্চা জরায়ুতে যে পানির থলিতে থাকে সেটা নরমালি ডেলিভারির ব্যথার সময় ধীরগতিতে ভাঙ্গে। কিন্তু কখনও ৭মাসের সময় যদি দেখা যায়, অল্প অল্প পানি যাচ্ছে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কারণ এসময় অনেকের প্রি ম্যাচিউর বাচ্চা হয়।

 অনেকের সময়ের আগেও ব্যথা হতে পারে ৷ যখন কোমর থেকে ব্যথা উঠে আস্তে আস্তে তলপেটে আসবে আর ব্যথার তীব্রতা অনেক থাকবে আবার একটু পর কমে যাবে, এভাবে গ্যাপ দিয়ে ব্যথা হবে তখন বুঝতে হবে, এটা ডেলিভারী পেইন যা সময়ের আগেও উঠতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে, তিনি যা বলেন তা করতে হবে৷ এসবক্ষেত্রে প্রি ম্যাচিউর বাচ্চা হয়, যাদের ইমিউনিটি কম থাকে।


ছবি: ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত

এসময় ফলস পেইনসহ নানা কারণে ব্যথা হতে পারে। তাই কি কারণে ব্যথা হচ্ছে তা জানার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

যদি কারও টানা ৩-৪ দিন জ্বর থাকে, তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

গর্ভফুল জরায়ুর নিচের দিকে থাকলে (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া) অথবা জরায়ু থেকে গর্ভফুল আলাদা হয়ে গেলে (এবরাপশিও প্লাসেন্টা) ব্লিডিং হতে পারে, তখন প্রসূতিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যে চিকিৎসক ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে থাকবেন সেই হসপিটালের মোবাইল নম্বর সেভ করে রাখবেন, যেন জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন৷ শুরু থেকেই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন।

বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে কিনা জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাম করুন।

গর্ভাবস্থায় ভয়, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ মানসিক চাপ তৈরি করে, যা প্রসূতির স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে। তাই অযথা ভয় পাবেন না, আতংকিত হবেন না। যে কোন প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মা হওয়ার আনন্দময় যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম

 

আরও পড়ুন
⦿ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস || First Trimester
⦿ গর্ভকালীন ৪ থেকে ৬ মাস || Second Trimester